Bangla
a year ago

পোল্ট্রি খাতে ৫২ দিনে লুট ৯৩৬ কোটি টাকা, অভিযোগ খামারিদের

Published :

Updated :

মুরগির উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রান্তিক খামারিদের সরিয়ে গত ৫২ দিনে ‘পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র’ ৯৩৬ কোটি হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন-বিপিএ।

তাদের ভাষ্য, এ খাতের কর্পোরেট গোষ্ঠী ইচ্ছেমতো ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয়, আর সেই দাম মেনে নিয়ে প্রান্তিক খামারি উৎপাদন করলে বাজারে ‘দাম কমিয়ে দিয়ে’ লোকসানে ফেলা হয়। তাতে করে প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদন থেকে ‘ছিটকে পড়ছে’। আবার খামারিরা উৎপাদনে না থাকলে ভোক্তাদের পকেট ‘ফাঁকা করে দেয়’ ওইসব বড় কোম্পানি।

সরকারি তদারকি না থাকায় এমন ‘হরিলুট’ চলছে বলে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার।

বিপিএ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩৫০০ টন। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন ১ কেজি উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, আর কর্পোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।

হিসাব কষে খামারিদের সংগঠনটি বলছে, প্রতিদিন যদি ২ হাজার টন সরবরাহ ধরে প্রতি কেজিতে ৬০ টাকাও অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়, তবে একদিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয় ১২ কোটি টাকা। ৩১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫২ দিনে সেই অতি মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬২৪ কোটি টাকা।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। প্রতি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০ থেকে ১৫ টাকা বিক্রয় হয়েছে। আর ৩১ জানুয়ারি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেই বাচ্চা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হয়।

“তাহলে ৫২ দিনে অতিরিক্ত মুনাফা হয়েছে ৩১২ কোটি টাকা। এ সময় প্রান্তিক খামারি উৎপাদনে না থাকার সুযোগে মুরগি ও বাচ্চা থেকে পোল্ট্রি শিল্পের পুঁজিবাদী মাফিয়া চক্র হাতিয়ে নিয়েছে ৯৩৬ কোটি টাকা।”

বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের এসব অভিযোগের বিষয়ে তার বলা ‘কর্পোরেট’ কোম্পানিগুলোর বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

তবে বাজারে কেজি প্রতি আড়াইশ বা তার চেয়ে বেশি দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ যে তার অর্ধেকের কাছাকাছি, সে কথা গত ৯ মার্চ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক সভায় প্রকাশ পায়।

ওই সভায় উপস্থিত কাজী ফার্মসের এমডি ও ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী জাহিন হাসানের ব্যাখ্যা জানতে চান মহাপরিচালক।

কাজী জাহিন জানিয়েছিলেন, তারা বাচ্চার উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে দাম বেড়েছে।

কেন উৎপাদন কমালেন- সে ব্যাখ্যায় তিনি বলেছিলেন, “গত বছরের মে, জুন জুলাই ও আগস্ট এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বাচ্চার চাহিদা ছিল না এবং সে সময় তা ৮ থেকে ৯ টাকায় নেমে আসে। ওই সময় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পোষানোর জন্য উৎপাদন কমানো হয়েছিল। বাচ্চার উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন ব্রয়লারের উৎপাদন কমে গেছে। ফলে দাম বেড়েছে।”

পোলট্রি খাতে জড়িত সব পক্ষের অংশগ্রহণে ওই মতবিনিময়ে এটাও প্রকাশ পায়, মুরগি উৎপাদনকারী বড় করপোরেট, পাইকার আর খুচরা ব্যবসায়ী, তিন পক্ষই মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করছে। আর এই বিষয়টি যেন প্রকাশ না পায়, তাই কোনো পর্যায়েই কোনো রশিদ দেওয়া হয় না।

এই তথ্য জেনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ দর ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, বড় চার কোম্পানি পাইকারিতে ১৯০-১৯৫ টাকা কেজিতে মুরগি বেচবে, যা আগে ছিল ২২০-২৩০ টাকা।

কিন্তু এই ঘোষণায় শুভংকরের ফাঁকি দেখছেন বিপিএ সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি শুক্রবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম নির্ধারণ না করে কেবল মুরগির দাম নির্ধারণ করলে বাজার স্থির থাকবে না।

“প্রান্তিক খামারি বাজারে না থাকায়-উৎপাদন না থাকায় সম্প্রতি মুরগির দাম অস্বাভাবিক হয়ে যায়। করপোরেট কোম্পানির চুক্তি খামার ও তাদের উৎপাদান-এ দুটাকে বন্ধ করতে পারলে সিন্ডিকেট বন্ধ হবে। করপোরেট কোম্পানি ফিড ও বাচ্চা উৎপাদন করবে, আমরা ডিম ও মুরগি উৎপাদন করব- তাহলে সিন্ডিকেট হবে না।”

বিপিএ বলছে, ফিড ও মুরগির বাচ্চার শতভাগ উৎপাদনে আছে কর্পোরেট গ্রুপ, তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে করে বাজার তাদের দখলে চলে যাচ্ছে।

“পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নিয়ন্ত্রণ এবং কর্পোরেট গ্রুপের মুরগি ডিম উৎপাদন বন্ধ করতে না পারলে কোনোদিন বাজার সিন্ডিকেট বন্ধ হবে না।”

বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানিয়ে খামারিদের সংগঠন বিপিএ বলছে, পোল্ট্রি সব পণ্যের উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক এবং পোল্ট্রি স্টোক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ‘পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভলপমেন্ট বোর্ড’ গঠন করতে হবে। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।     

Share this news