Bangla
3 months ago

নিজ বাসা পিঠে নিয়ে ঘোরা কে এই ব্যক্তি?

 লিউ লিংচাওয়ের ভ্রাম্যমাণ আবাস
 লিউ লিংচাওয়ের ভ্রাম্যমাণ আবাস

প্রকাশিত হয়েছে :

সংশোধিত :

যে খোলসে নিজেকে লুকায়, সেই খোলসটি পিঠে বহন করে শামুক। কিন্তু যদি এমন কিছু করে কোনও মানবসন্তান, তবে চোখ কপালে উঠতে পারে অনেকেরই। 

হ্যাঁ, তেমন ঘটনা আসলেই ঘটেছে। চীনের জুয়াংজি প্রদেশের ছোট্ট এক গ্রামে থাকতেন লিউ লিংচাও। বছর বিশেক আগে তার ভেতর জাগে নতুন আকাঙ্খা ও স্বপ্ন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'পাহাড় চূড়ায়' কবিতার মতোই ছোট্ট গ্রাম আর ভালো লাগে না লিউয়ের। বড় শহরে গিয়ে থাকতে চাইলেন তিনি। গুয়াংঝউ অথবা সেনঝেনট এর মতো বড় কোনও শহরে থাকবেন বলে গ্রাম ছাড়লেন। অবশ্য নিছক শখের বশে গ্রাম ছাড়েননি তিনি৷ তার বাবার মৃত্যুর পর তার কাজ চলে যায়। স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

লিউ ভাবেন ছোট-খাটো কাজ করে সামান্য যা আয় হয়, তা তো ঘরভাড়া দিতেই চলে যাচ্ছে। তাহলে ঘর ছেড়ে বেরিয়েই পড়া যাক! পথই হোক ঠিকানা। যেন জেমসের সেই বিখ্যাত গানটিকেই নিজের জীবনের অংশ করে নিলেন লিউ- 'পথের বাপই বাপরে মনা, পথের মা-ই মা/ এই পথের মাঝেই খুঁজে পাবি আপন ঠিকানা।' 

পনের বছর পেরিয়ে গেল দেখতে দেখতে। লিউয়ের মনে হলো, দেশের বাড়ি ফিরে যাওয়া দরকার। এর জন্য পাড়ি দিতে হবে ৪৫০ মাইল পথ। 

লিউ ঠিক করলেন পথটা পাড়ি দেবেন পায়ে হেঁটে। কোনও যানবাহন নেবেন না। তবে সঙ্গে নেবেন নিজের বাসস্থান! ঠিক তা-ই করলেন লিউ। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ির সময়টায় পিঠে করে নিয়ে ঘুরলেন নিজ বাসা! 

সেনঝেন থেকে পায়ে হেঁটে জুয়াংজি যাওয়ার অর্থ হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে তেতুলিয়ায় যাওয়া। তবে খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই আছে এমন উদাহরণ, যেখানে এক উপকূল থেকে আরেক উপকূল অভিমুখে কোনও কোনো ব্যক্তি ৩০০০ মাইল হেঁটেছেন এক বছরে। তাহলে লিউ লিংচাওয়ের ৪৫০ মাইল রাস্তা হাঁটতে পাঁচবছর লাগলো কেন? 

কারণ, পিঠে করে নিজের আবাসটি বহন করা। ১৩২ পাউন্ড ওজনের ৫ ফিট বাই ৭ ফিট ক্ষেত্রফলের এই বাসাটি ছিলো হাঁটাপথে তার নিত্যসঙ্গী। 

যেখানে যখন প্রয়োজন হতো, যাত্রা থামিয়ে বিছানা পেতে বসতেন লিউ। তার বিছানার বাইরে শুকনো খাবার ও অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসও আছে এই বাসায়। 

লিউ আক্ষরিক অর্থেই বাসস্থানকে বানিয়েছিলেন নিত্যসঙ্গী। নিজের সবকিছুর দেখভাল নিজেই করতেন। ফেলে দেয়া বোতল কুড়িয়ে রিসাইকেল (পুনরায় ব্যবহার উপযোগী)  করে বিক্রি করতেন। এতে যাত্রাপথে আয়ের চাকা চলমান রাখাও সম্ভব হয়েছিল তার পক্ষে। 

২০২৩ সাল পর্যন্ত  তিনবার লিউ বদলেছিলেন তার এই ভ্রাম্যমাণ বাসা। পাঁচ বছরে চতুর্থবারের মতো গড়া বাসাটি পিঠে নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন গন্তব্যের দিকে চলেছেন। ২০২৩ সালে যখন তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, তখন আর খুব বেশি পথ বাকি নেই। লিউ লিংচাও তার দেশের বাড়ি জুয়াংজি থেকে তখন ছিলেন মাত্র ২০ মাইল দূরে। সে বছরেরই শেষদিকে তিনি শেষপর্যন্ত পৌঁছে যান তার দেশের বাড়িতে। সফল পরিসমাপ্তি ঘটে তা এই দীর্ঘ যাত্রার। 

mahmudnewaz939@gmail.com

শেয়ার করুন